প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বেলাভূমি সুসং দূর্গাপুর

প্রকাশঃ জুলাই ১৪, ২০১৬ সময়ঃ ১:৩০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৩০ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

DSC00429

ঘুরতে যে সব সময় বিদেশেই যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমাদের দেশেই আছে অসাধারণ সুন্দর সুন্দর সব জায়গা। এমনই একটি জায়গার নাম সুসং দুর্গাপুর। নেত্রকোনা জেলার উত্তর প্রান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশের এক জনপদ এই সুসং দূর্গাপুর। যেখানে রয়েছে স্বচ্ছ পানির জলেশ্বরী নদী ও সবুজ পাহাড়ের যুগলবন্দী। তাই পর্যটকদের কাছে লোভনীয় এক জায়গার নাম সুসং দূর্গাপুর।

আয়তনে খুব বেশি বড় না হলেও বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে দুর্গাপুরে। এখানে বেড়াতে এসে আপনি দেখতে পারেন সোমেশ্বরী নদী, নদীর ওপারে চিনামাটির এবং আরও নানা রঙের পাহাড় – সাদা, গোলাপী এবং কমলা, বিজয়পুর বিডিআর ক্যাম্প, রানীক্ষং চার্চ, পুটিমারী মিশন,  টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি এবং আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি ও জাদুঘর।

দুর্গাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সুন্দরী নদী সোমেশ্বরী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে সৃষ্ট এ নদী মেঘালয়ের বাঘমারা বাজার হয়ে রানিখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জনশ্রুতি আছে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ এ অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নাম লাভ করে। একেক ঋতুতে এ নদীর সৌন্দর্য একেক রকম। তবে সারা বছরই এর জল টলটলে স্বচ্ছ। বর্ষা মৌসুমে বেড়ে গেলেও শীতে সোমেশ্বরীর জল অনেকাংশেই কমে যায়।

10401438_1534916486736003_6790195726959138716_n

আবার দূর্গাপুরের আরেকটি আকর্ষণীয় দর্শন স্থান জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনঃনির্মাণ করেন। এ জমিদার বাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। বড় বাড়ি, মেজো বাড়ি, আবু বাড়ি ও দুই আনি বাড়ি। জানা যায়, ১২৮০ মতান্তরে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময়ে কামরূপ কামাখ্যা থেকে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্রাহ্মণ এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সোমেশ্বর পাঠক গারো রাজা বৈশ্যকে পরাজিত ও নিহত করে রাজ্য দখল করে নেন। সে সময়ে সুসং রাজ্যের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী ছিল আদিবাসী, যাদের অধিকাংশই আবার গারো। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিনশ বছর তার বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারী করে।

এছাড়া দেখতে পারেন টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টংক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয় এই স্মৃতিসৌধতি। সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছ দূর এগোলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণিসিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে তিন দিনব্যাপী মণি মেলা নামে লোকজ মেলা বসে।

b75ec4ea2a9c4ec4d31c681a639cf005-pic-16

দুর্গাপুরের বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমিও একটি দর্শনীয় স্থান। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। বিরিশিরিসহ সুসং দুর্গাপুর ও এর আশপাশের উপজেলা কলমাকান্দা, পূর্বধলা, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়ায় রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের জীবনধারা যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি বৈচিত্র্যময় এদের সংস্কৃতিও। তাদের এসব ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং চর্চার জন্যই ১৯৭৭ সালে বিরিশিরিতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এখানে প্রায় সারা বছরই নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্য, অনেকে সুসং দূর্গাপুর আর বিরিশিরির মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। আসলে সুসং দূর্গাপূর হচ্ছে উপজেলা যার মধ্যে আছে বিরিসিরি নামের একটা জায়গা, যেটা মূল দূর্গাপুরে ঢোকার কয়েক কি.মি. আগে পড়ে। এ জায়গাটি মূলতঃ গারো আদিবাসী অধ্যুষিত। এখানেই আছে আদিবাসী কালচালারাল একাডেমী।

বিরিসিরি থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় যেতে হয় রানিক্ষং গ্রামে। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানিক্ষং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।  রাশমণি স্মৃতিসৌধ  রানিখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশমণি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টংক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে এ স্মৃতিসৌধটি।

b

রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।

এছাড়া সুসং দূর্গাপুরের প্রাকৃতিক সোউন্দর্যের কথা বলাই বাহুল্য। আপনি এলাকাজুড়ে হেঁটে বেড়াবেন আর উপভোগ করবেন প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য। এই এলাকার প্রতেকটি চিত্রপটই যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা।

যেভাবে যাবেন – ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। এ পথে চলাচলকারী দু’একটি বাস সার্ভিস হলো সরকার, জিন্নাত ইত্যাদি। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। এ ছাড়া বাস কিংবা রেলে ময়মনসিংহ গিয়েও সেখান থেকে বাসে বিরিশিরি আসতে পারেন।

থাকা-খাওয়া – দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস। এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা। যোগাযোগ :০১৭১৬২৭৭৬৩৭, ০১৮১৮৬১৩৮৯৬।  এ ছাড়া আছে ইয়ুথ ওমেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইডব্লিউসিএ পরিচালিত আরেকটি রেস্ট হাউস। এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৬০০ টাকা। যোগাযোগ :০১৭১১০২৭৯০১, ০১৭১২০৪২৯১৬। এ ছাড়া দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। স্বর্ণা গেস্ট হাউস (০১৭২৮৪৩৮৭১২), হোটেল সুসং (০১৯১৪৭৯১২৫৪), হোটেল গুলশান (০১৭১১১৫০৮০৭) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।

আর খাওয়ার জন্য নিরালা হোটেলটা বোধহয় সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। তবে আরো কয়েকটা ছোটখাট হোটেল আছে। পরোটা আর ডিম প্রভৃতি দিয়ে খাওয়ার কাজ সারাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G